আজ ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে শিবপুরের কলা চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক–

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার কলা চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার দুলালপুর ও সাধারচর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখে যায়, প্রায় সব বাগানের গাছই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগানে দুমড়েমুচড়ে রয়েছে কলা গাছ। ফলন্ত এসব গাছের কলা আর মাসখানেক পরই পরিপক্ব হওয়ার কথা। ৭/৮ মাস কঠোর পরিশ্রম ও নগদ অর্থ খরচ করার পর ফসল ঘরে তোলার সময় এই ক্ষতি কলা চাষিদের সর্বস্বান্ত করে ফেলেছে।
সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুলালপুর ইউনিয়নের দুলালপুর, দরগারবন্ধ, পাড়াতলা, লাখপুর, আলীনগর এবং সাধারচর ইউনিয়নের সৈদেরখোলা, দক্ষিণ সাধারচর, উত্তর সাধারচর, শৈশাদী এলাকায় প্রায় ৪শ” হেক্টর জমিতে তিন হাজার কৃষক কলা চাষ করেন। গতকাল (২৪ অক্টোবর) সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে এসব কলা বাগানের অধিকাংশ গাছই নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকেই কলা চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এত বড় ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সামর্থ্য নেই অধিকাংশ কৃষকের। তাই তারা সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন। সিত্রাং এর আঘাতে বিধ্বস্ত কলা বাগান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, ইতোমধ্যে কলা চাষের সব ব্যয় শেষ করেছেন তারা। কেউ এক’ বিঘা, কেউ দেড়’ ও তিন’ বিঘা জমিতে কলার আবাদ করেছেন। অপেক্ষায় ছিলেন বিক্রি করার। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সেই স্বপ্ন নিমিষেই নষ্ট করে দিয়ে গেছে।
কলা চাষি সাধারচর ইউনিয়নের সৈদরখোলা গ্ৰামের মৃত আব্দুল হেকিমের ছেলে আলামিন বলেন, ‘এবার দেড়’ বিঘা জমিতে প্রায় ৪ শতাধিক চাম্পা কলা গাছ লাগিয়েছি। সার, কীটনাশক, লেবার দিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকার মতো খরচ করেছি। ৭-৮ মাস ধরে গাছের পরিচর্যা করেছি। আর এক মাস পরেই পরিপক্ব কলা বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাত সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে। আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আনুমানিক আমার ৩লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং ৮ মাস আমার পরিশ্রম বৃথাই গেলো।
একই ইউনিয়নের দক্ষিণ সাধারচর গ্রামের মৃত আলফাজ উদ্দিন ছেলে কলা চাষি আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমার এক বিঘা জমিতে নরসিংদীর বিখ্যাত অমৃত সাগর কলা চাষ করেছিলাম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে আমার ও আমার ভাইয়ের ৭ শতাধিক অমৃত সাগর কলার বাগান চুরমার করে দিলো। এখন আমি কী খাবো? আর কী পরবো? কিছুরই দিশা খুঁজে পাচ্ছি না।’ আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। আবার নতুন করে চাষ করতে সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করি।

আরেক চাষি দুলালপুর ইউনিয়নের আলিনগর গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে রাব্বানী ভুঁইয়া বলেন,আমার দুই বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা চাষ করি। এই ঝড় আমাকে পথে বসিয়ে দিয়ে গেছে।
সাধারচর ইউপি সদস্য নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চলের বেশিরভাগ কৃষকই কলা চাষ করে জীবনধারণ করেন। এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে কলা বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লাখ লাখ টাকা লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে কৃষকদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কলা চাষিদের অপূরণীয় ক্ষতি করে দিয়েছে।’ এসব কৃষক বাঁচাতে সরকারের কাছে আমি সহায়তা দাবি করছি।’
শিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন সাদেক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে শিবপুর উপজেলায় প্রায় ৫৩ হেক্টর জমিতে কলা ও ১০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দফতরে রিপোর্ট করা হয়েছে। এটা অপূরণীয় ক্ষতি। সরকার কলা চাষিদের সহায়তা দিলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মধ্যে বিতরণ করা হবে।’

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...